ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রের কবলে চালের বাজার, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের চকরিয়ায় অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। গত ৫দিনের ব্যবধানে বর্তমানে বিভিন্ন জাতের প্রতিবস্তা চাউলের দামে বেড়েছে ৫শত থেকে ৮শত টাকা। বর্তমানে চকরিয়ায় চাউল ব্যবসা অসাধু ফজল সিন্ডিকেট চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে চালের বাজার। ওই অসাধু সিন্ডিকেট প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়িয়ে দিচ্ছে চাইলের বাজার। গত ৫দিনের ব্যবধানে প্রতি ৫০ কেজী ওজনের চাউলের বস্তা প্রতি বেড়ে গেছে ৫শত টাকা থেকে ৮শত টাকা পর্য়ন্ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চকরিয়া পৌরসদরসহ আশেপাশে প্রায় অর্ধশতাধিক চাউলের গুদাম রয়েছে। এসব গুদামে কমপক্ষে কয়েকহাজার মে.টন চাউল মজুদ থাকার পরও কেন লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে? চকরিয়া অসাধু চাউল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে স্বাভাবিক বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে প্রশাসন থেকে ছাড়কৃত খাদ্য সষ্যের ডিও’র বিপরীতে চকরিয়া থেকে শত শত মেট্রিন টন বরাদ্দের চাউল চকরিয়ার সিন্ডিকেট অসাধূ চাউল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ন্যার্য মূল্য না পাওয়ায় অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে চাউলের ডিও বিক্রি করতে বাদ্য হচ্ছে।
চকরিয়ায় সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে প্রশাসন থেকে ছাড়কৃত খাদ্য সষ্যের ডিও সিন্ডিকেটের কাছে দীর্ঘ কয়েক যুগ পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। চকরিয়ায় উন্নয়ন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, চকরিয়া অসাধু ডিও ব্যবসায়ী ফজল সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছে। উন্নয়ন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা উপযুক্ত মুল্যে ডিও’ র চাউল বিক্রি করতে পারায় আগামীতে উন্নয়ন প্রকল্প গুলো সঠিত ভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
অপরদিকে গতমাসে চকরিয়া উপজেলা খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সম্পন্ন হয়েছে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ কর্মসুচি। ফলে এখন এলাকার কৃষকদের মোকামে নেই মজুদ ধান। অন্যদিকে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের ডিও’র বিপরীতে বরাদ্দের চাউল কিনে নিচ্ছে এসব অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। বর্তমানে চকরিয়ায় চাউলের এসব অসাধু ডিও ব্যবসায়ী চক্রের কবলে জিন্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সরকারি ঘোষনার আলোকে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকার ৭৭৮জন কৃষকের কাছ থেকে গতমাসে ধান সংগ্রহ কর্মসুচি সম্পন্ন করেছে খাদ্য প্রশাসন। ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে সরকারি মনিটরিং জোরদার ও ভালো দাম পাওয়ায় এলাকার কৃষকরা তাদের মোকামের বেশিরভাগ ধান সরকারি গুদামে সরবরাহ দিয়ে ফেলেছেন।
অপরদিকে এখনো মাঠে কর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে চলতি মৌসুমের আমান ধান চাষ। ফলে বর্তমানে উপজেলার প্রায় প্রতি এলাকায় কৃষকের হাতে নেই মজুদ ধান। ফলে চকরিয়া অসাধু চাউল সিন্ডিকেটের কমদামে ক্রয় করা চাউল চড়া দামে বিক্রি রাতারাতি কোটি পতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এ দিকে চড়াদামে চাউল কিনে দরিদ্র জনগোষ্টি প্রতারিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে (আজ রাত সাড়ে ৯টার সময় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) এখনো পর্যন্ত কোন প্রকার কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারি তরফে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগের বরাদ্দের বিপরীতে এগিয়ে চলছে অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য মন্ত্রাণালয় থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার মেট্রিন টন খাদ্য সষ্য বা চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব প্রকল্পের বিপরীতে প্রশাসন থেকে দুইদাফে অন্তত সাড়ে ৬ শত মেটিক ট্রন চাউলের ডিও ছাড় দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ছাড়ও দেয়া এসব চাউলের ডিও হাতিয়ে নিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তাঁরা ইতোমধ্যে ডিও’র বিপরীতে বরাদ্দের চাউল সমুহ চকরিয়ার বাজারে বিক্রি না মজুদ করে চড়াদামে বিক্রি করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এসব চাউল মজুদ করে রাখায় স্থানীয় বাজারে চাউলের চরম সংকট তৈরী হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা রাইস মিল মালিক সমিতির কর্মকর্তারা বলেছেন, গতমাসে উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর সরকারি ঘোষনার আলোকে চকরিয়ার প্রতিটি এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে নায্য দামে ধান কিনে নিয়েছেন। এখন মাঠে আছে চাষকৃত আমান ধান। এগুলো কৃষকের হাতে আসতে আরও একমাস সময় লাগবে। এই অবস্থার কারণে বর্তমানে চকরিয়ার কোন কৃষকের হাতে ধান নেই। ফলে রাইচ মিল গুলোতে ধান সরবরাহ না থাকায় চাউল উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে।
রাইচ মিল মালিক সমিতির লোকজনের দাবি, একদিকে সরকারি কর্মসুচির আলোকে এলাকার কৃষকরা গতমাসে মোকামের সব ধান খাদ্য বিভাগকে বিক্রি করে দিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের ডিও’র বিপরীতে বরাদ্দের চাউল নিয়ে মজুদ করে রাখছে ডিও ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থার কারণে চকরিয়া উপজেলার প্রতিটি রাইচ মিল ছাড়াও হাট-বাজারে চাহিদা মতো চাউলের সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলার একাধিক হাট-বাজার সরেজমিন ঘুরে দেখাযায়, বদরখালী বাজার, ইলিশিয়া বাজার, চকরিয়া পৌরশহর, ডুলাহাজারা, খুটাখালী বিএমচর, কোনাখালী, হারবাং ও বরইতলীসহ বিভিন্ন বাজারে মিনিকেট চাল প্রতিকেজি বিক্রি হতো ৫২টাকা এখন সে চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬০টাকা বা তারও উপরে। মোটা চাল বিক্রি হতো ৪০-৪২টাকা কেজিতে এখন সেই চাল কিনতে হচ্ছে প্রতিকেজি ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা।
আবার দামের ক্ষেত্রে এক একটি এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন দামে পাওয়া গেছে চালের দাম। এ নিয়ে কোন ব্যবসায়ীরা সদুত্তর দিতে পারছে না। আবার অনেকে বলেছেন, কারোনা ভাইরাস ইস্যুর জন্য চাউল আমদানী জটিলতাকেও দায়ী করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে চাউলের বাজারে কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মহল।

পাঠকের মতামত: